শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩

অযু কিভাবে করতে হয়? অযু ভঙ্গের কারণ ও অযু করার পদ্ধতি জেনে নিন।

অযু

          শরীর পবিত্র করিবার নিয়তে পাক পানি দ্বারা শরীয়তের কানুন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ ধৌত করার নামই অযু । যে পানি দিয়া অযু করিবে তাহা অবশ্যই পবিত্র হইবে । যেমন - নদী ও খাল ইত্যাদি প্রবাহিত পানি এবং নৃপ , পুকুর , বরফ ও ঝর্ণার পানি ইত্যাদি ।

অযু করার পদ্ধতি 


অযুর প্রকারভেদ


অযু তিন প্রকার : যথা- ১ ম , ফরয , যেমন- নামাযের জন্য অযু করা ২ য় , ওয়াজিব , যেমন- তাওয়াফ করার জন্য অযু করা ৩ য় , মোস্তাহাব যেমন মুখস্থ কোরআন তেলাওয়াতের জন্য , নিদ্রা যাইবার জন্য , গোসলের জন্য , সর্বদাই অযুর সহিত থাকিবার জন্য অযু করা ।


অযুর ফরয


অযুতে চারি ফরয ১। মুখমণ্ডল ধৌত করা ( অর্থাৎ কপালের উপরিভাগ হইতে থুতনির নীচ পর্যন্ত , এক কানের লতি হইতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করা ) । ২ কনুইসমেত দুই হাত ধৌত করা । ৩। মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা । ৪ দুই পায়ের গিরা পর্যন্ত ধৌত করা ।


অযুর সুন্নত


১। অয়ুর প্রারম্ভে বিসমিল্লাহ বলা , ২। উভয় হাত কব্‌জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া , ৩। মেসওয়াক করা , ৪। তিনবার কুলি করা , ৫। তিনবার নাকের ছিদ্রে দক্ষিন হস্ত দ্বারা পানি প্রবেশ করাইয়া বাম হাত দ্বারা ঝাড়িয়া ফেলা , ৬। সমস্ত মুখমন্ডল তিনবার ধোয়া ; ৭। কনুইসহ দুই হাত তিনবার ধোয়া । ৮। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা , ৯। দুই কান একবার মাসেহ করা , ১০। গিরাসহ দুই পা তিনবার ধোয়া , ১১। উভয় হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি খেলাল করা , ১২। এক অঙ্গ শুকাইবার পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধোয়া । ১৩। তরতীব মত অযু করা , ১৪। নিয়ত করা ।


অযু ভঙ্গের কারণসমূহ


১। প্রস্রাব - পায়খানার রাস্তা দিয়া মলমূত্র বাহির হইলে , ২। রক্ত বা পুঁ বাহির হইয়া গড়াইয়া পড়িলে , ৩। বায়ু নির্গত হইলে , ৪। ক্রিমি বাহির হইলে

 ৫। বমি হইলে , ৬। কোন বস্তুর সাথে ঠেস দিয়া বা চিত , কাত হইয়া ঘুমাইলে , ৭। বেহুশ হইলে , ৮। পাগল বা মাতাল হইলে এবং ৯। নামাযের মধ্যে আওয়াজ করিয়া হাসিলে ।



অযুর মোস্তাহাব


১। ডান দিক হইতে অযু আরম্ভ করা , ২। কেবলামুখী বসিয়া অযু করা , ৩। অযুতে অন্য লোক হইতে সাহায্য না লওয়া , । ৪। নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে অযু করা , ৫। অযুর সময় কথা না বলা , ৬। উঁচু স্থানে বসিয়া অযু করা , ৭। অযুর নিয়ত মুখে বলা , ৮। অযুর অঙ্গ ভালরূপে মর্দন করিয়া ধোয়া , ৯ । আংটি কিংবা গহনা হেলাইয়া দেওয়া , ১০। ঘাড় মাসেহ করা , ১১ । প্রয়োজনের বেশী পানি খরচ না করা , ১২। অযুর শেষে দুরূদ ও কালেমা শাহ পদাত পড়া , ১২। অযুর শেষে দাঁড়াইয়া অবশিষ্ট পানির কিছু পান করা ।


অযুর মাকরূহ সমূহ


( ১ ) মুখ ধৌত করার সময় মুখে জোরে পানি নিক্ষেপ করা । ( ২ ) নূতন পানি দ্বারা তিনবার মাথা মাসেহ করা । ( ৩ ) বিনা ওযরে কুলি ও নাকে পানি বাম হাতে দেওয়া । ( ৪ ) ডান হাতে নাক সাফ করা । ( ৫ ) অযুর কোন পাত্র নিজের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া লওয়া ( সেইরূপ মসজিদে কোন স্থান নিজের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া লওয়াও মাকরুহ ) । ( ৬ ) অযুর কোন অঙ্গ তিন বারের কম বেশী ধৌত করা । ( ৭ ) পানি অপব্যয় করা ।


অযুর নিয়তঃ

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আতাওয়াযযাআ লিরাফইল হাদাসি ওয়াসতিবাহাতাল্লিসসালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তাআ'লা ।


অর্থঃ নাপাকী দূর করিবার জন্য ও নামায শুদ্ধভাবে পড়িবার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য অযু করিতেছি ।

অযু শুরুর দোয়া


উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল আ'লিয়্যিল আ'যীম ওয়ালহামদু লিল্লাহি আ'লা দীনিল ইসলামি আল ইসলামু হাককুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন ।


অর্থ  ঃ সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করিতেছি এবং ইসলাম ধর্মের জন্য সম্যক প্রশংসাই আল্লাহ্র উপযুক্ত । কেননা , ইসলাম সত্য ও কুফর ( অবিশ্বাসী ) মিথ্যা এবং ইসলাম জ্যোতির্ময় এবং কুফর অন্ধকারময় ।


অযুর শেষে দোআ


اللهم اجعلني من التوابين واجعلني من المتطهرين واجعلني من عبادك الصلحين سبحانك وأتوب إليك *


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআ'লনী মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াজআ'লনী মিনাল মুতাতাহিরীনা ওয়াজআ’লনী মিন ই'বাদিকাসসালিহীনা সোবহানাকা ওয়া আতুবু ইলাইকা ।


অর্থ : হে খোদা ! আমাকে তওবাকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং একজন পবিত্র লোক বানাও এবং তোমার একজন সৎ বান্দা হিসাবে গণ্য কর । তুমি পবিত্র , তোমার নিকট তওবা করিতেছি ।


অযু করিবার নিয়ম


( ১ ) পায়খানা - পেশাবের হাজত থাকিলে দূর করিয়া , গোসল দরকার হইলে গোসল করিয়া কেবলামুখী হইয়া উঁচু স্থানে বসিবে । তারপর বিসমিল্লাহসহ অযুর নিয়ত করত অযু আরম্ভ করিবে এবং মনে মনে অযুর দোয়া পাঠ করিবে ।




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

ধন্যবাদ, শেয়ার করুন।